আদম চূড়া (শ্রী পদ বা পবিত্র পদচিহ্ন), শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের শ্রীপাড়া প্রদেশে অবস্থিত একটি পর্বত চূড়া যা বৌদ্ধধর্মের অনুসারীদের কাছে অতি পবিত্র স্থান।এই চূড়ায় একটি পায়ের ছাপ আছে যার দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি।১৫০৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। সেই থেকে পাহাড়ের নাম আদম পাহাড়। চূড়ার যে স্থানে পায়ের চিহ্নটি অবস্থিত সেই স্থানে বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সূর্যের আলো পড়ে না আবার মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টিও সেখানে পড়ে না।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি গৌতম বুদ্ধের, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এই পদচিহ্নটি তাদের দেবতা শিবের এবং মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন এটি পৃথিবীর প্রথম মানব আদম -এর পদচিহ্ন।পাহাড়ের চারপাশের বনাঞ্চল বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগার, যেখানে হাতি থেকে চিতাবাঘ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির এবং অনেক স্থানীয় প্রজাতি বাস করে। জল বিভাজিকা হিসেবে আদম চূড়া গুরুত্বপূর্ণ পর্বতটি শ্রীলঙ্কার তিনটি জলস্রোত: কেলানি নদী, ওয়ালাওয়ে নদী এবং কালু গঙ্গা নদীর প্রধান উৎস।
ইতিহাসঃ
বৌদ্ধ ধর্মমতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পায়ের ছাপটি আবিষ্কার হয়। আবিষ্কৃত হবার পর পদচিহ্নের চারপাশে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এই চূড়ার উচ্চতা ৭৩৫৯ ফুট বা ২২৪৩ মিটার। চূড়াটির চারপাশে সবুজের বিপুল সমারোহ ও আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট নদী ও ঝরণা।
পাহাড়টি সুউচ্চ হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছানো খুবই কষ্ট সাধ্য। সেখানে পৌছাতে হলে প্রথমে নৌকায় চড়ে কিছু পথ যেতে হয় তারপর পায়ে হেঁটে উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়। পাহাড়েরচূড়ায় পৌঁছানোর জন্য পাহাড়ের গা বেয়ে তিনটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়টির অনেকাংশ সবুজ গাছে ঢাকা থাকার কারণে এই পাহাড়ে রয়েছে অনেক বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়।বিশ্বের যেসব নামকরা পর্যটক এই চূড়াটি ভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলো।
রহস্যে ঘেরা আদম পাহাড়ঃ
অ্যাডামস পিকে বা আদম পাহাড়ে আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছানোর পথটি চলে গেছে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। সেই জঙ্গলে আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। চূড়ার কাছাকাছি আছে একটি ধাতব সিঁড়ি, তাতে রয়েছে ৪০০০ ধাপ। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এই সিঁড়িটি কবে, কে নির্মাণ করেছিল তারও কোনো হদিস পাওয়া যায় না। পাহাড়ের ওপরের আবহাওয়াও তেমন অনুকূল নয়। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ তখন পাহাড় মেঘের ভেতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘের জেঁকে আসা মেঘে অদৃশ্য হয়ে পড়ে চূড়া। পাহাড় ও পাহাড়ের রহস্যময় পদচিহ্ন নিয়ে ‘দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট : এ কালচারাল হিস্ট্রি অব অ্যাডামস পিক’ নামে একটি বই রয়েছে, লিখেছেন মারকুস অকসল্যান্ড। এতে সুন্দরভাবে পাহাড়ের নানা অজানা কথা বলা আছে।