আজাদ মনসুর, কক্সবাজার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার)
আইন কমিশনের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আইন প্রণয়ন ও সংসদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কক্সবাজারের এ কে মোহাম্মদ হোসেন। গতকাল তাঁকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন মাস আইন কমিশনের পরামর্শক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সরকারের সচিব পদমর্যাদার এ আইন বিশেষজ্ঞকে।
এ কে মোহাম্মদ হোসেন অন্তবর্তী সরকারের আইন সংস্কার কাজে সহায়তা করবেন। যেহেতু ক্ষমতার পালাবদলে শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসনে রদবদল, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল ও গত সরকারের আমলে বঞ্চিতদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত এসেছে একের পর এক।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরেছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ লক্ষ্যে এসব জায়গায় ছয় জনকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন অন্তবর্তী সরকার প্রধান।
আইনজীবী, বিচারক ও আইন প্রণয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কাজ করেছেন তিনি এ কে মোহাম্মদ হোসেন। তিনি একজন আইন ও সংসদ রীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, যিনি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি বিষয়ে কাজ করছেন।
তিনি ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্টইন্ডিজ থেকে আইন প্রণয়ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্মসচিবও (ড্রাফটিং) ছিলেন এ কে মোহাম্মদ হোসেন। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সপ্রিম কোর্টে আইনি পেশায় যুক্ত হন। সংসদে উত্থাপিত সরকারি বিল পর্যালোচনা, মনিটরিং এবং মূল্যায়ন এবং বিভিন্ন বিধি ও রীতিনীতি প্রণয়ন কাজেও দক্ষতা রয়েছে এ আইন পণ্ডিতের।
এছাড়া রিসোর্স পার্সন হিসেবে সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা এবং সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে এ মানুষটির।
বিশ্ব ব্যাংক, আইএফসি, আইএলও, ইউএনডিপি, ইউএসএইড, ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছাড়াও বাংলাদেশ কোডের সংশোধন ও হালনাগাদ করার জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একটি প্রকল্পে কাজ করেছেন তিনি।
এ কে হোসেনের জীবন থেকে…
কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বিশিষ্ট লোকজ গবেষক, সাংবাদিক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম প্রণিত ‘কক্সবাজারের ইতিহাস’ গ্রন্থে প্রকাশিত এ কে হোসেনের জীবনী প্রকাশ পেয়েছে। গবেষণাধর্মী এ গ্রন্থে স্থান পাওয়া কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকার বাসিন্দা এ কে হোসেনের জীবনী হুবহু তুলে ধরেছেন লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক আজাদ মনসুর।
কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোমাতলী গ্রামে ১৯৫৪ সালের ১৬ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: আসদ আলী সিকদার, মাতা: সখিনা খাতুন। সরকারি চাকুরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস। তবে কক্সবাজার শহরে স্থায়ী আবাস। ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে এসএসসি, ১৯৭২ সালে কক্সবাজার কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে এলএলবি অনার্স ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যয়ন শেষে কক্সবাজারে আইন পেশা শুরু করলেও পরে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে বিচারক হিসেবে যোগদান করেন এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় মুন্সেফ-ম্যাজিট্রেট, যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রেষণে সহকারী সচিব, সিনিয়র লেজিসলেটিভ ড্রাফট্সম্যান, উপ-সচিব এবং যুগ্ম সচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে যুক্ত হন। জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করেন।
কমনওয়েলথ-এর বৃত্তি নিয়ে দি ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ১৯৯০ সালে পিজিডি ইন লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। জাতীয় সংসদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করেন। সংবিধান সংশোধনসহ সিংহভাগ আইনের খসড়া প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন।
সরকারি চাকরিকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। দীর্ঘ তিন দশক বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন শেষে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৪-২০০৯ সময়কালে ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে সমিতিরি কাজে গতি সঞ্চার হয়, যার ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
অবসর জীবনে বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘের বিভিন্ন অংগ প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি দাতা সংস্থা এবং দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইন প্রণয়ন ও সংসদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে মামলা মোকাদ্দমায় জড়িতদের আইন ও অধিকার বিষয়ক সংগঠন Association of Peoples’ involve in Litigation (APIL) (আপিল) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে কক্সবাজার মহকুমারকে জেলায় উন্নীত করার জন্য জনমত গঠনের লক্ষ্যে তাঁর নেতৃত্বে জেলা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। যাতে তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত পরিষদের উদ্যোগে কক্সবাজার শহর, রামু, সদর, উখিয়া, উখিয়ার কোট বাজার ও ঈদগাঁও হাই স্কুল মাঠে একাধিক সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজারকে জেলা ঘোষণার দাবীতে কক্সবাজার শহরে দিনব্যাপী হরতাল পালিত হয়। তৎকালিন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান কক্সবাজারে রাষ্ট্রীয় সফরে এলে পাবলিক হল মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে বিশাল মিছিল সহকারে পাবলিক হল মাঠে জনসভার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানকে কক্সবাজারকে জেলা ঘোষণার দাবী জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
প্রকাশনা: আইনগ্রন্থ Bangladesh Code (1-44 Volume) (Government publication) as Consultants Team Leader (2015), Legislative Desk book (Government publication) as Team Leader (2022), Statutory Legal Dictionary: Definitions of Words and Expressions used in Bangladesh (2016), বাংলাদেশ ঋণ সালিশী আইন (১৯৮৯)